মহাসড়কের পাশে পড়ে ছিল মোটরসাইকেলচালকের মরদেহ। শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকায় প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা ছিল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেছেন। তখন থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। তবে সাত মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা গেছে, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ১১ আগষ্ট সোমবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মাগুরায় এ ঘটনা ঘটে। পরদিন ভোরে সদর উপজেলার জাগলা চারা বটতলা এলাকায় মাগুরা-যশোর মহাসড়কের পাশ থেকে রফিকুল ইসলাম (৪০) নামের ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি সদর উপজেলার গোয়ালবাড়ি গ্রামের প্রয়াত আক্কাস মোল্যার ছেলে। রফিকুল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের লাইন সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক লীগের সহপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম দিনে কাজ করার পাশাপাশি রাতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতেন। ঘটনার আগের দিন রাত আটটার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। পরদিন ভোরে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি পুলিশ। স্বজনদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তিনি আগে স্ট্রোক করেছেন। এ জন্য পুলিশ ধারণা করে, স্ট্রোক করেই হয়তো মারা গেছেন। তবে গত সপ্তাহে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি জানার পর গত রোববার নিহতের স্ত্রী স্বপ্না খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী রাতে যাঁদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন, এমন ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার পর সন্দেহভাজন হিসেবে পৌরসভার পারলা বিশ্বাসপাড়ার রুস্তম বিশ্বাসের ছেলে মোস্তাক বিশ্বাস (৪৫), জাগলা উত্তর পাড়ার একাব্বর মোল্লার ছেলে আনিসুর রহমান (৪৭) ও একই গ্রামের একলাছ উদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলাম (৪০) নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহতের স্বজনেরা জানান, জাগলা এলাকায় রাতে জুয়া খেলা হতো। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসতেন। সেখানে লোক আনা-নেওয়া করতেন রফিকুল ইসলাম। সেখানে কোনো বিষয় নিয়ে বিরোধ থেকে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিহতের স্ত্রী মামলা করেছেন। সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। কেন বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে, এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
তথ্যসুত্র: প্রথম আলো।