আগামী ৫ ই আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের দিনে সেখানে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে বলে আশা করেছেন জেলা প্রশাসক ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক আলী আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর অধ্যাপক এমবি বাকের, ইসলামী আন্দোলনের মাগুরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা নাজিরুল ইসলাম। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরা জেলা শাখার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার সেলিম হোসাইন ,সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসাইনসহ সরকারি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তারা।
ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে এমন একটি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মাগুরার জেলা প্রশাসক ও ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের নেতারা।
তারা বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের কালের সাক্ষী হিসেবে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।
মাগুরা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা।
জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকার জুলাই শহীদদের স্মৃতি জাগরুক এবং ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখতে সারাদেশে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি স্মৃতিস্তম্ভ হবে একই মাপে, একই মানে এবং একই নকশায়।
তিনি জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের স্থাপত্য বিভাগ স্মৃতিস্তম্ভের নকশা করেছে, যা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে আগামী ৫ আগস্ট জুলাই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এই স্মৃতিস্তম্ভে।
জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে চির জাগরুক রাখা দরকার। বাঙালির আড়াইশ’ বছরের ইতিহাসে এমন গণঅভ্যুত্থান আর কখনো হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হয়েছে বা ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান-সবই হয়েছে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে। একটি স্বাধীন দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসে বিরল। এত মানুষের শহীদ হওয়া নজিরবিহীন। এত বড় একটা ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভ খুব প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি।
মাগুরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, মাগুরা জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা হবে ১৮ ফুট, প্রস্ত ছয় ফুট।
তিনি বলেন, ২৪’র জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রজনতা উচ্চারিত স্লোগানগুলো জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন অংশে খোদাই করে তুল ধরা হবে। এসব স্লোগান ছিল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা, উদ্দীপনার ভাষা। এগুলোই আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক জুলাই শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখবে। এটি হবে মাগুরাবাসীর জন্যও এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকে গর্বের বলে অভিহিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাগুরা জেলা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ হুসাইন। হুসাইন বলেন, জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ হবে আমাদের পরিচয়। যখন আমরা ম্যুরালের কাছে যাবো, ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিবাদ-প্রতিরোধের স্মৃতি মনে পড়বে। সেই সময়ে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হবে নতুন প্রজন্ম।
একইসাথে দেশে যাতে ভবিষ্যতে আর কোন শাসক স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে না পারে তারও একটা বার্তা দেবে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। জুলাই শহীদদের জন্য সারাদেশে এ ধরনের আরও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ জরুরি উল্লেখ করেছেন ’২৪ এর অভ্যূত্থানে মাগুরা রাজপথের আরও একজন লড়াকু যোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার সেলিম হোসাইন।
মাগুরা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সংগঠক বলেন, বাংলাদেশ শুধু না, বিশ্বের ইতিহাসে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা। অনেক দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, কিন্তু একসাথে এত ছাত্রজনতা হত্যা ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যে গণহত্যা হয়েছে সেই শহীদদের নানাভাবে অপমান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ, দুই সময়ে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। সে কারণে দুই সময়ের শহীদদের প্রতিই আমাদেরকে সমানভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
নির্মাণ হতে যাওয়া জুলাই স্মৃতিস্তম্ভকে কালের সাক্ষী উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার সেলিম বলেন, দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাদের আজীবন বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। স্মৃতিস্তম্ভের মধ্য দিয়ে এসব বীর শহীদ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকে।