খবরের কাগজ
রূপসী বাংলা
চাঁদপুরে জাহাজে নিহত ৭ জনের মধ্যে মাগুরার ২ জন
মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম
আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
facebook sharing buttonmessenger sharing buttonsharethis sharing button
চাঁদপুরে জাহাজে নিহত ৭ জনের মধ্যে মাগুরার ২ জন
মো. মাজেদুল ইসলাম (বায়ে) ও সাজিবুল মুন্সী। ছবি: সংগৃহীত
ঝামা বরকতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা শেষ করে ছুটির কয়দিনের জন্য চাকরিতে গিয়েছিলেন মো. মাজেদুল ইসলাম। ১২ দিন আগে চাকরি নিয়েছিলেন এম ভি আল বাখেরা জাহাজের লস্কর পদে। অল্প কয়েকদিন চাকরি করে বাড়ি ফিরে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল তার। তবে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া হলো না তার। বাড়িতে এসেছে মৃত্যুর খবর। জাহাজে হত্যার শিকার হওয়া সাতজনের মধ্যে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার চর যশোবন্তপুর গ্রামের আনিচ মোল্লার ছেলে মো. মাজেদুল ইসলাম (১৫)। একই উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের পলাশবাড়িয়া গ্রামের অপর নিহত ব্যক্তি দাউদ মুন্সির ছেলে সাজিবুল মুন্সী (২২)। সেও একই জাহাজের গ্রিজার পদে চাকরি করত। ৬ থেকে সাত মাস আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সাজিবুল ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে বাড়ি থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন, চিন্তা করো না দ্রুতই বাড়িতে ফিরব। তবে এ যাত্রায় সেও ফিরছেন লাশ হয়ে। উভয় বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
নিহত মাজেদুলের প্রতিবেশি চাচা রাজিব মিয়া বলেন, মাজেদুলের বাবা ঢাকাতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার বড় ভাই একটি জাহাজে চাকরি করেন। পরিশ্রমী মাজেদুল মাদ্রাসা থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়ে দশম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার কথা। মাঝের ছুটির কয় দিনে পরিবারে একটু সচ্ছলতা আনতে ও অনেকটা শখের বসে জাহাজে চাকরি নিয়ে বাড়ি থেকে যান ১২ দিন আগে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মাজেদুল ভাইদের মধ্যে ছোট। সোমবার বিকালে আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে খবর পাই জাহাজটিতে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে আমাদের মাজেদুলকে গুরুতর আহত অবস্থায় চাঁদপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তার মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন।
অপর নিহত সাজিবুল মুন্সির চাচাতো ভাই জাকির হোসেন লিটু বলেন, প্রায় পাঁচ বছর হলো সাজিবুল জাহাজটিতে চাকরি করছেন। সর্বশেষ গ্রিজার পদে চাকরিরত ছিল সে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাজিবুল মেজ। ৬ থেকে ৭ মাস আগে বিয়ে করেছেন। ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে ১৫-১৬ দিন আগে কর্মস্থলে ফিরে যান সাজিবুল। বাড়িতে বলে গিয়েছিল দ্রুতই আবারও বাড়িতে আসবেন। তবে সোমবার হঠাৎ তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বিকাল ৩টার দিকে জানতে পারি জাহাজটিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর রাত ৭টার দিকে জানতে পারি হাসপাতালে যাওয়ার পর সাজিবুল মারা গিয়েছে।
এব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, নিহত স্বজনদের মারফত দু’জনের মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরেছি। তাদের পরিবারের সদস্যরা ইতোমধ্যে আনার জন্য সেখানে গিয়েছে। এখনো অফিসিয়ালি কোনো কাগজপত্র পাইনি তবে পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে অবস্থানরত মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের আল বাখেরাহ জাহাজ থেকে সাতজনের মরদেহ এবং গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ। তবে এটি ডাকাতি না কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা এখনো নিশ্চিত করতে পারে নি পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল, চলছে তদন্ত।